পোস্টগুলি

বাংলা কবিতায় ব্রাহ্মণ্যবাদ

  বাংলা কবিতায় ব্রাহ্মণ্যবাদ মুরারি সিংহ   একটা কথা, যেটা এখন আমার খুব মনে হচ্ছে, কোনো রাখ-ঢাক না করে সেটা খুব স্পষ্ট করে বলা দরকার; বলছি, আজকে আমরা যাকে মূলধারার বাংলা কবিতা বলে জানি তা এখনো ব্রাহ্মণ্যবাদের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেনি।     জানি, এখানে ব্রাহ্মণ্যবাদ শব্দটার প্রয়োগ দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠতে পারে। তাঁরা প্রশ্ন করতে পারেন ব্রাহ্মণ্যবাদ বলে আমরা যাকে বুঝি, সে তো   এক বিশেষ ধর্মীয়-সমাজের সঙ্গে যুক্ত; বাংলা- কবিতার সঙ্গে তার সম্পর্ক কোথায়। মজাটা এখানেই। আসলে   কবিতায় ব্রাহ্মণ্যবাদ বলতে আমি যা বোঝাতে চাইছি, সেটাকে এক কথায় বলা যায়, এক ধরণের বিশেষ মানসিকতা। একটা সংস্কার। সেই মানসিকতা বা সংস্কারের অন্যতম লক্ষণ পরম নিষ্ঠার সঙ্গে কবিতায় তথাকথিত শুদ্ধতা ও পবিত্রতা রক্ষার প্রতি অবিচল থাকা। সেই সঙ্গে এটাও দেখা, কবিতার ছন্দ-প্রকরণ-ভাষা বা শব্দ-প্রয়োগ কোনোকিছুতেই যেন কোনো উদ্দেশ্যমূলক ভাব না থাকে। যেন কোনো হইচই, চিৎকার বা গলাবাজি ঢুকে না পড়ে। কবিতা যেন হয় এক চিরায়ত বোধের নির্যাস।   অর্থাৎ কবিতা হবে কবির নিজস্ব মন্ত্রোচ্চারণ এবং ব্যক্তিগত...

| ১৪০০ সাল পত্রিকা | : কবিতা : মুরারি সিংহ

| ১৪০০ সাল পত্রিকা | : কবিতা : মুরারি সিংহ :   মুরারি সিংহ ভাষা কখনো আমি রাবার-স্ট্যাম্পের ভাষায় কথা বলি, কখনো রাবার-স্ট্যাম্প আমার ভাষায় কথা বলে সোলার-সিস্টেমের পেটের ভিতরে মাঝে মাঝে গ...

কে যেন ঘুর ঘুর করে (১৮)

কে যেন ঘুর ঘুর করে ( ১৮ )   আমাদের পুরাণের গল্পগুলো সত্যিই বড়ো অদ্ভূত। এইসব গল্প-কাহিনিতে লোকায়ত-ভাবনার কত রূপই না প্রকাশিত হয়েছে।  কিন্তু আমাদের এমনি হতভাগ্য অবস্থা আমরা তাদের মোটা দাগের ধর্মীয় আবরণে ঢেকে তাতে গদগদ ভক্তিরস উপুড় করে দিয়েছি। অন্যদিকে সেই ধর্মীয় আস্তরণের অজুহাত দেখিয়ে আমাদের সারস্বত সমাজও পৌরাণিক ব্যাপারগুলোকে অছূত করে রেখেছে। সেগুলো থেকে নিজেদের অতীতকে নতুন করে আবিষ্কারের রাস্তায় হাঁটেনি, আলাপ-আলোচনায় সেগুলো নিয়ে বিকল্প কোনো ভাবনাকে আমল দেয়নি। অথচ এদেশের লোকভাবনার বিকাশ ও বিস্তারকে জানার জন্যে এগুলো হয়ে উঠতে পারে অমূল্য আকর। আমরা ভুলে যাই, বৈদিক আর্যরা এদেশের ভূমিপুত্র-ভূমিকন্যাদের জন্য তাদের সদর দরজাতে খিল এঁটে দিলেও সমাজের খিড়কি দরজাটা কিন্তু খোলাই ছিল। সেই পথেই এদেশের কালো-কুৎসিত মানুষগুলো তাদের ধর্মভাবনা, সমাজভাবনা, সাংস্কৃতিক চিন্তা সবকিছু বগলদাবা করে শিষ্ট-সমাজের অন্দরমহলে ঢুকে পড়ে প্রাচীন যা-কিছু সব তছনছ করে তাকে দেশীয় ঐতিহ্যে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে।  প্রাচীন কর্তারা শুধু সবকিছুর উপর বারে বারে ব্রাহ্মণ্যমতের মন্ত্রপূত জল ছিটিয়ে তাদের শুদ্ধ...

একটি অনুরোধ

  বন্ধুরা, আমার ‘কে যেন ঘুর ঘুর করে’ এই শিরোনামে আমরা ব্লগ ‘প্রান্তজন’-এ যে ধারাবাহিক গদ্যটা লিখছি তার আজ ১৭ নং কিস্তি প্রকাশিত হয়েছে।  কিছু মন্তব্য পেয়েছি, ব্লগের ভিউয়ারও হাজার ছুঁতে চলল, যাঁরা পড়ছেন সকলকে ধন্যবাদ। আমি চাইছি, সম্পূর্ণ নতুন এবং বিকল্প ঘরানার এই গদ্যটা  আরো বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছে যাক এবং আরো বেশি মতামত আসুক। তবে এ পর্যন্ত যাঁরা মতামত দিয়েছেন  সকলেই ফেসবুকে, তাঁদের অনুরোধ করব আমার ব্লগেঅ আপনাদের মূল্যবান মতামত দিন, সেখানে আপনাদের ভালো-লাগা, মন্দ-লাগা লিপিবদ্ধ করুন। পারলে ব্লগটি ফলো করুন।  তাহলে আমি পরের কিস্তিগুলো লিখতে আরো উৎসাহিত হব। সকলকে ধন্যবাদ। সকলেই ভালো থাকুন।

কে যেন ঘুর ঘুর করে (১৭)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে ( ১৭ ) ভাবনাবাবুর ভাষণ শুনে আমি থ হয়ে ঘেমে থস থস করছি, মনে পড়ছে সেই কবে অবন-ঠাকুর লিখে গেছেন ‘মাথাটা যেন বাংলা খবরের কাগজ, মূল্য দুই পয়সা মাত্র’, আজকের দিন হলে তিনি নিশ্চয় খবরের কাগজের জায়গায় বাংলা সিরিয়াল লিখতেন। আমার নাতির আবার গণেশের মূর্তি খুব ফেভারিট। সে সিন্থেটিক ক্লে দিয়ে গণপতি-বাপ্পার মূর্তি বানায়, তার ড্রয়িংখাতায় সেই মূর্তির ছবি আঁকে, সঙ্গে ইঁদুরটাকে জুড়ে দিতে ভোলে না। তাই দেখে সবজান্তা গামছাওলা আবার শুরু করলেন, তাহলে বোঝ, কোথাকার একটা তুচ্ছ ইঁদুর তাও শেষ পর্যন্ত সর্ব-বিঘ্ননাশক গণদেবতার বাহন হয়ে গেল।  এটা গেঁড়ি-গুগলি-কাঁকড়ি-খাওয়া মাথা ছাড়া ওই ঘি-দুধ-মাখনে পুষ্ট ভদ্রলোকেদের মগজে কখনো আসত?  এবার আসা যাক আরেক হাইব্রিড মূর্তির কথায়; তিনি আবার বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার বাবা নৃসিংহদেব। স্ফিংসের ছিল সিংহের দেহ আর মানুষের মুণ্ডু, আমাদের অবতারের বেলায় দেখ, সেটা আবার কেমন উলটে গেল। তেনার আধাআধি। দেহের নীচের দিকটা মানুষের আর উপরের দিকটা সিংহের।   তুই যদি বিষ্ণুর অবতারের  রূপগুলো পরের পর সাজিয়ে দেখিস তাহলে ডারুইনের থেয়োরির একটা ছায়া দেখতে পাব...

কে যেন ঘুর ঘুর করে (১৬)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে ( ১৬ ) এই গদ্যটা লেখা শুরু করার পর থেকেই প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে , কখন ভাবনাবাবু এসে দরজার কড়া ঠক্‌ঠক করবে। তখন দরজা না খুললে, ভাবনাবাবু গোঁসা করে ফিরে যাবেন, আমার লেখাও আর   এগোবে না। আর এই লকডাউনের বাজারে তেনার সঙ্গে আড্ডাটাও বেশ ভালো জমে। তিনি ভূত না হলেও অদ্ভূত তো বটে।   বিক্রম-বেতালের গল্পের বেতালের মতোই সব সময় আমার ঘাড়ে চেপে থাকতে চায়।   থুড়ি , ঘাড়ে নয় মাথায়।   এখন আবার তাঁর কড়ানাড়া শোনা যাচ্ছে। দেখি, প্রভু কী বলেন। তাঁকে আপ্যায়ন করে বললাম, বলেন কত্তা, আপনার গ্রিক মাইথোলজির গল্প শেষ হল।   তিনি বললেন সে কী রে পাগলা, শুধু গ্রিক মাইথোলজি নিয়ে পড়ে থাকলেই হবে, একবার নিজের দেশের দিকে তাকাবি না।   বললাম ওরে বাবা, আবার আমার দেশেও আছে নাকি ওই রকম কোনো স্ফিংস বা আনুবিসের মুর্তি?   ভাবনাবাবু বললেন, কেন, অত বড়ো বড়ো দুটো চোখ নিয়ে তুই কি গণেশ-বাবাজির মূর্তি দেখতে পাস না।   আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, সে কী, কোথায় স্ফিংস-আনুবিস আর কোথায় নাদুস-নুদুস গণেশ-ঠাকুর! কামাল করছেন স্যার।   ভাবনাবাবু একটু বিষণ্ণ হয়ে বললেন, কেন রে, স্বদেশের ...

কে যেন ঘুর ঘুর করে (১৫)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে ( ১৫ ) মাথার মধ্যে ঘুর-ঘুরে পোকার কারবার আমাকে মাঝে মাঝে অস্থির করে দেয়। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমার ভাবনাবাবুর হানাদারি। আসলে ভাবনাবাবুই আমার সেই ঘুর-ঘুরে পোকা। আমাকে সে ক্রমাগত প্রশ্ন করতে থাকে, এটা কী, ওটা কেন। মাঝে মাঝে মনে হয়, দূর-দূর, ভাবনার যখন কোনো আদি-অন্ত নেই, তখন এত ভেবে সব সময় নিজেকে ব্যতিব্যস্ত করে কী লাভ? আর কিছু ভাবব না। চুপচাপ বসে থাকব, শুয়ে থাকব, নিশ্চিন্তে ঘুমোব্‌ টিভি দেখব, মোবাইল সার্ফ করব। আমা্দের কর্তাবাবুরাই তো বলে গেছেন, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে কী হবে? এবার বরং চার্বাক-বাবার শিষ্য হয়ে যাব, খাও-পিও-জিও। মনে তো অনেক কিছুই হয়, কিন্তু টিভির ঘ্যানঘ্যানানি ভালো লাগে না, মোবাইলেও বিরক্ত আসে; তখন আবার ভাবনা আসে, কিছু না ভেবে থাকতে পারি কই। মনুষ্য-জন্মের বোধহয় এই এক জ্বালা। সারা-জীবন শুধু ভেবে যাও। আর এটা পড়ো, ওটা পড়ো, একে জিজ্ঞেস করো, ওর আলোচনায় যোগ দাও, ইত্যাদি। সুতরাং ভাবতেই হয়, আর অমনি ভাবনাবাবু এসে হাজির। সেদিন তো হরপ্পা-সভ্যতার পশুপতির সঙ্গে মিশরের স্ফিংসকে মিলিয়ে দিল, আজ আবার কী বলে দেখি। বুঝেছি বুঝেছি, তুই পশুপতি আর স্ফিংস নিয়ে ভাবছিস ...

কে যেন ঘুর ঘুর করে (১৪)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে ( ১৪ ) আমি ভাবছি আর ভাবনাবাবুর মতিগতি লক্ষ করছি, কুত করার চেষ্টা করছি সে আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছে। ভাবনাবাবু আবার জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা বল তো, পশুপতিকে দেখে আর কিছু মনে পড়ছে না, আমি স্বভাব দোষে ঘাড় নাড়িয়ে জানিয়ে দিলাম, না; ভাবনাবাবু বললেন, সে কী রে, তুই স্ফিংসের মূর্তির কথা ভুলে গেলি, মিশরের পিরামিডের উপরে সেই যে সিংহ-মানুষ, যার শরীরটা সিংহের কিন্তু মাথাটা মানুষের মতো। তার দুপাশে আবার দুটো ডানাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পিরামিডের মাথায় সে সগর্বে বসে আছে ধনরত্নের প্রহরী হিসেবে। আমি সায় দিয়ে বললাম, তা বটে, একদম মনে ছিল না বস। ভাবনাবাবু বললেন তোর আর দোষ কী, এর আগে তো কেউ পশুপতির সঙ্গে স্ফিংসকে মেলাতে যায়নি। কারণ পিরামিড, মিশর, মমি, স্ফিংস এসব বিরাট বড়ো বড়ো ঘটনা, অভিজাত ব্যাপার-স্যাপার, মিশরের বা গ্রিকের রূপকথায় তাদের নিয়ে কত গল্প-কাহিনি, তার সঙ্গে হরপ্পার ওই সামান্য পশুপতির মূর্তিকে আর কোন আহাম্মক মেলাতে যাবে বল। আমাদের নজরটা তো সব সময়ে উপরের দিকে থাকে, মানে গজদন্ত মিনারের দিকে, আমরা মাটির দিকে তো তাকিয়ে দেখি না সেখানে কী ঘটছে; কিন্তু ভেবে দেখ দুটো মূল আইডিয়া কিন্তু...

কে যেন ঘুর ঘুর করে (১৩)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে (১৩) আচ্ছা , আমি তো এতক্ষণ আমার ভাবনাবাবুর কথা তো বলেই যাচ্ছি , এই ভাবনাবাবুই কি তাহলে আমার স্বপ্নে দেখা ছায়ামূর্তি ; হতে পারে। হয়ত সে আমারই কোনো অচেনা সত্তা , আমারই কোনো অমীমাংসীত আমসত্ত। আমার সব সমাধানের ভিতর ঢুকে , সব মীমাংসার ভিতর হানা দিয়ে সেই হয়ত এত খাবলা খাবলা হরিনাম তুলে নিতে চাইছে। আচ্ছা আমার ভাবনাবাবু কি প্রকৃতই বাবু না বিবি , ব্যাটাছেলে না মেয়েছেলে , নারী না পুরুষ , এসব তো ভেবে দেখিনি কখনো। আজ হঠাৎ ভাবতে হচ্ছে। শুনেছি একজন মানুষের মধ্যে নাকি নারী এবং পুরুষ দুটো সত্তাই থাকে। শ্রীচৈতন্য নাকি নিজের শরীরের মধ্যে একই সঙ্গে রাধা এবং কৃষ্ণের সত্তাকে অনুভব করেছিলেন। বুদ্ধের যুগনব্ধ রূপের কথা বলা হয়েছে , পুরাণে আছে শিবের অর্ধ-নারীশ্বর মূর্তির কথা। আর দেহতত্ত্বের গভীরে ঢুকে লোককবি তো বলেই দিয়েছেন ‘তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা মন জানো না’। যাই হোক , আমার ভাবনার মুখ চোখ নাক কিছুই দেখি না , কন্ঠস্বরও শুনি না , তবু তার সঙ্গে বাক্যালাপ হয় ; অতঃপর একজন পুরুষ হিসেবেই ধরে নিচ্ছি আমার ভাবনাবাবুও পুরুষ , তবে অবয়বহীন। ভাবনাবাবু বলছেন আর আমি শুনছি, আমাত বিড়বিড়ানি শুনে তিনি আ...

কে যেন ঘুর ঘুর করে (১২)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে (১২) কোনো কিছু লিখতে বসলে অনেক কিছুই মাথার মধ্যে ঘুর-ঘুর করে। সেখানে অনেক ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলা এসে হাজির হয়। প্রশ্ন করে। আমাকে দিয়ে তারা অনেক কথাই ভাবিয়ে নেয়। আজ বেদের কথা লিখতে লিখতে হঠাৎ এক নতুন ব্যাটা হাজির , সে আমাকে প্রশ্ন করল , আচ্ছা আর্যরা আসার আগেও তো এদেশের একটা নিজস্ব সভ্যতা ছিল। বললাম হ্যাঁ , তা ছিল ;   হরপ্পা সভ্যাতার কথা আমরা সকলেই ইতিহাস বইয়ে পড়েছি। সেটা আর্যদের আগের এবং আর্যদের চেয়ে অনেক উন্নত সভ্যতা। এদেশের সেই সময়ের মানুষেরাই তা গড়ে তুলেছিল। আর্যরা তো আধা-সভ্য প্যাসটোরাল জাতি। অন্যদিকে এদেশে তখন পুরোপুরি নাগরিক সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশ। তাও আবার নয় নয় করে দেড় হাজার বছরের পুরোনো সেই সভ্যতা। যদিও তা তাম্রযুগের নাগরিক সভ্যতা , তবু সে এতটাই সুপরিকল্পিত ও প্রাগ্রসর যে তার ভগ্নাবশেষ দেখে আধুনিক সময়ের বিদেশী পণ্ডিতেরা পর্যন্ত হতবাক হয়ে গেছেন। তাকে নিয়ে বিস্তর মাথা ঘামিয়েছেন, অনেক লেখালিখি করেছেন। মাটি খুঁড়ে খুঁজে পাওয়া স্থানগুলিতে পাকা ইঁটের তৈরি বাড়ি-ঘর , স্নানাগার , শস্যগোলা থেকে শুরু করে উন্নত-মানের রাস্তাঘাট , ড্রেনেজ-সিস্টেম , ওজন ও পরিমাপ এবং অ...

কে যেন ঘুর ঘুর করে (১১)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে (১১) এক সময়ে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক প্রশ্ন তুলেছিলেন , Can the subaltern speak?’ শ্রদ্ধেয় অমর্ত্য সেন তাঁর বই The Argumentative Indians- এর ভূমিকায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন-“ Just before the general elections in the spring of 2004 , when I visited a Bengali village not far from my own home, I was told by a villager, who was barely literate and certainly very poor ‘It is not hard to silence us, but that is not because we cannot speak.” পুরুষ-শাসিত সমাজে গড়পড়তা নারীকেই subaltern- এর দলে ফেলা যায়। বেশিরভাগ সময়েই তাঁরা খুবই নিঃশব্দে সংসার-ধর্ম পালন করেন, সংসারকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলেন এবং সমাজ ও সংসারের নানান অন্যায় , অবিচার , অত্যাচার , বঞ্চনা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হন। বহু যুগ আগে বৈদিক সমাজে কিন্তু প্রথম প্রতিবাদটা ধ্বনিত হয়েছিল সেই নারী-কণ্ঠেই। সে-প্রতিবাদ ছিল অবশ্যই পুরুষ-অহমিকার বিরুদ্ধে। সেই একমেবাদ্বিতীয়ম নারীটির নাম ‘বাক’। আজ আমরা বাক্‌-দেবী নামে যে সরস্বতী-ঠাকুরের পুজো করি ইনি সেই বাক্‌-দেবী নন ; ইতি একজন ঋষিণী , অম্ভৃণ নামের এক আর্য...

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (১০)

  কে যেন ঘুর-ঘুর করে  (১০) মুরারি সিংহ সে-দিন পাশের ঘর থেকে গিন্নির সঙ্গে কন্যার কথোপকথন কানে আসছিল। শুনলাম মা বেটিকে বলছে, কেশব-নাগের পাটিগণিতে পিতা-পুত্রের বয়সের অঙ্ক আছে, মাতা-পুত্র বা মাতা-কন্যার অঙ্ক আছে কি? আমার গিন্নিটি এই রকমই, মাঝে মাঝে খুব অদ্ভূত কথা বলে। তাতে যেমন বেশ মজা থাকে তেমনি অন্য রকম ভাবনার ঝলকও বেরিয়ে আসে। সেদিন গ্যাস-ওয়ালা গ্যাস নিয়ে এসেছে, সিলিন্ডারটা বেশ পুরোনো রংচটা আর তোবড়ানো, গিন্নি বলে উঠল, ও-মা , এর বয়স তো মোদির চেয়ে বেশি, এমন সিলিন্ডার নেব না যাও; যদিও পরে সেটাই ঘরে ঢুকল। কিন্তু মা-মেয়ের মুখে কেশব-নাগের অঙ্কের কথা শুনে আমার মাথার মধ্যে আবার কী যেন ঘুর-ঘুর করতে শুরু করল। মনে হল, সত্যিই তো এই পুরুষ-শাসিত সমাজে নারী-পুরুষ আমরা তো সকলেই পুরুষতন্ত্রের হাতের ক্রীড়নক মাত্র। সচরাচর সেই-ভাষাতেই কথা বলে থাকি। এখন নাহয় নারী অধিকারের পক্ষে অনেক আন্দোলন হচ্ছে, অনেক জনমত তৈরি হচ্ছে, মহিলাদের ছোটো করার, তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার পুরোনো অভ্যাস থেকে অনেকেই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন; ভাবলাম, আচ্ছা, পুরাকাল থেকে চিন্তার জগৎটা কি পুরুষদের একার অধিকারে? সেখানে কি নার...

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (৯)

  কে যেন ঘুর-ঘুর করে  (৯) মুরারি সিংহ চিন্তাশীল মানুষের মগজকে থামিয়ে রাখা যায় না , চিন্তা-প্রবাহকেও রোধ করা যায় না। সেই তরঙ্গকে আটকাতে গেলেই আসে বাঁধ-বাঁধার পালা। রক্ষণশীলরা যুগে যুগে সেটাই করে থাকেন। বৈদিক যুগেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম দিকে বেদে যখন বহু-দেবতার অস্তিত্ত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল , তখন প্রথম প্রথম বেদের মন্ত্র-দ্রষ্টারা সৃষ্টি এবং সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে একটা ঐকমত্যে পৌঁছতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নানা সংশয় থেকেই যাচ্ছিল; এইখানে দেখা মিলল এমন এক সূক্তের যাতে ইন্দ্র-মিত্র-বরুণ ইত্যাদি-প্রভৃতি দেবতাদের বাদ দিয়ে এক কাল্পনিক পুরুষকে জগতের সৃষ্টিকর্তার আসনে বসিয়ে দেওয়া হল। ঘোষণা করা হল তিনিই জগতের প্রভু, তিনিই বিশ্ব-ব্রহ্মণ্ডের হর্তা-কর্তা-বিধাতা। সূক্তটি পড়লেই বোঝা যায় সেটি সমাজের রক্ষণশীল কর্তাবাবুদের কাজ। কারণ সেখানে কোনো রকম যুক্তিতর্কের মধ্যে না গিয়ে এমন এক বিশালাকার পুরুষের রূপ কল্পনা করা হল, যাঁর এক হাজার মাথা , এক হাজার হাত, এক হাজার পা; নিজের সৃষ্টিকে ছাড়িয়ে তাঁর শরীর আরো দশ আঙুল বেড়ে গেছে। কী উদ্ভট এই বিস্তার। সেই পুরুষের গৌরবের তো সীমা-পরিসীমা নেই; প...