পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (১০)

  কে যেন ঘুর-ঘুর করে  (১০) মুরারি সিংহ সে-দিন পাশের ঘর থেকে গিন্নির সঙ্গে কন্যার কথোপকথন কানে আসছিল। শুনলাম মা বেটিকে বলছে, কেশব-নাগের পাটিগণিতে পিতা-পুত্রের বয়সের অঙ্ক আছে, মাতা-পুত্র বা মাতা-কন্যার অঙ্ক আছে কি? আমার গিন্নিটি এই রকমই, মাঝে মাঝে খুব অদ্ভূত কথা বলে। তাতে যেমন বেশ মজা থাকে তেমনি অন্য রকম ভাবনার ঝলকও বেরিয়ে আসে। সেদিন গ্যাস-ওয়ালা গ্যাস নিয়ে এসেছে, সিলিন্ডারটা বেশ পুরোনো রংচটা আর তোবড়ানো, গিন্নি বলে উঠল, ও-মা , এর বয়স তো মোদির চেয়ে বেশি, এমন সিলিন্ডার নেব না যাও; যদিও পরে সেটাই ঘরে ঢুকল। কিন্তু মা-মেয়ের মুখে কেশব-নাগের অঙ্কের কথা শুনে আমার মাথার মধ্যে আবার কী যেন ঘুর-ঘুর করতে শুরু করল। মনে হল, সত্যিই তো এই পুরুষ-শাসিত সমাজে নারী-পুরুষ আমরা তো সকলেই পুরুষতন্ত্রের হাতের ক্রীড়নক মাত্র। সচরাচর সেই-ভাষাতেই কথা বলে থাকি। এখন নাহয় নারী অধিকারের পক্ষে অনেক আন্দোলন হচ্ছে, অনেক জনমত তৈরি হচ্ছে, মহিলাদের ছোটো করার, তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার পুরোনো অভ্যাস থেকে অনেকেই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন; ভাবলাম, আচ্ছা, পুরাকাল থেকে চিন্তার জগৎটা কি পুরুষদের একার অধিকারে? সেখানে কি নার...

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (৯)

  কে যেন ঘুর-ঘুর করে  (৯) মুরারি সিংহ চিন্তাশীল মানুষের মগজকে থামিয়ে রাখা যায় না , চিন্তা-প্রবাহকেও রোধ করা যায় না। সেই তরঙ্গকে আটকাতে গেলেই আসে বাঁধ-বাঁধার পালা। রক্ষণশীলরা যুগে যুগে সেটাই করে থাকেন। বৈদিক যুগেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম দিকে বেদে যখন বহু-দেবতার অস্তিত্ত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল , তখন প্রথম প্রথম বেদের মন্ত্র-দ্রষ্টারা সৃষ্টি এবং সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে একটা ঐকমত্যে পৌঁছতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নানা সংশয় থেকেই যাচ্ছিল; এইখানে দেখা মিলল এমন এক সূক্তের যাতে ইন্দ্র-মিত্র-বরুণ ইত্যাদি-প্রভৃতি দেবতাদের বাদ দিয়ে এক কাল্পনিক পুরুষকে জগতের সৃষ্টিকর্তার আসনে বসিয়ে দেওয়া হল। ঘোষণা করা হল তিনিই জগতের প্রভু, তিনিই বিশ্ব-ব্রহ্মণ্ডের হর্তা-কর্তা-বিধাতা। সূক্তটি পড়লেই বোঝা যায় সেটি সমাজের রক্ষণশীল কর্তাবাবুদের কাজ। কারণ সেখানে কোনো রকম যুক্তিতর্কের মধ্যে না গিয়ে এমন এক বিশালাকার পুরুষের রূপ কল্পনা করা হল, যাঁর এক হাজার মাথা , এক হাজার হাত, এক হাজার পা; নিজের সৃষ্টিকে ছাড়িয়ে তাঁর শরীর আরো দশ আঙুল বেড়ে গেছে। কী উদ্ভট এই বিস্তার। সেই পুরুষের গৌরবের তো সীমা-পরিসীমা নেই; প...

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (৮)

  কে যেন ঘুর-ঘুর করে  (৮) মুরারি সিংহ ঋকবেদের দশম মণ্ডলের ১২৯তম ‘নাসদীয় সূক্ত’-এর কথা বলছিলাম। বলছিলাম, ঋষিরা তখন সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে গভীর চিন্তায় মেতে আছেন। সূক্তের পরবর্তী ঋকগুলোতে জানানো হল , সর্বপ্রথমে অন্ধকারের দ্বারা অন্ধকার আবৃত ছিল। সব জায়গাই ছিল চিহ্ন-বর্জিত এবং চারদিক ছিল জলময়। বুঝুন ,   মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের চিন্তায় কেমন ফাঁক তৈরি হচ্ছে ;   কিছুই ছিল না বলেই বলা হচ্ছে অন্ধকার ছিল এবং জল ছিল। তার মানে অন্ধকার এবং জল কি ‘কিছু’-র মধ্যে পড়ে না? যাই হোক, তারপর বলা হল , যা-কিছু-নেই তাই দিয়ে সেই সর্বব্যাপী আচ্ছন্ন ছিলেন। তার মানে, এখানে ঋষিদের মাথায় এক সর্বব্যাপী-র ভাবনা এল। তারপর ,   ‘তপস্যার প্রভাবে সেই এক বস্তু জন্মিলেন’। এখানে বোঝা গেল না ,   যেখানে কেউ ছিল না , সেখানে তপস্যা এল কোথা থেকে এবং সেই তপস্যটা কে করে ছিল। তবে ‘সর্বব্যাপী’ যখন এসেই গেছেন ,   তখন অন্য সবকিছুই আসবে ,   সুতরাং সবকিছু তার উপরেই ছেড়ে দেওয়া ভালো। তাহলে আর পরের ভাবনায় কোনো ঝুঁকি থাকে না। মাথার মধ্যে ঘুর-ঘুর করা কোনো প্রশ্নও থাকবে না। বলা হল , ‘সর্বপ্রথমে মনের উপর কামের ...

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (৭)

  কে যেন ঘুর-ঘুর করে  (৭) আলোচনা-প্রসঙ্গে বেদের কথা বলছিলাম। বলছিলাম জীবনানন্দের কথাও। সেই দূরবর্তী বৈদিক সময়ে বহু-দেবতার কল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আর্য-ঋষি প্রশ্ন তুলেছিলেন ,   কোন দেবতাকে হবিষ্য নিবেদন করব ;   বহু যুগ কেটে যাবার পর আধুনিক-সময়ে এসে ‘ মহাপৃথিবীর’-কবি কোনো দেবতা নয় , কোনো হবিও নয়, নিজের হৃদয়ের কাছেই নিবেদন করলেন, তাঁর সংশয়ের কথা। বললেন , ‘ আমি সব দেবতারে ছেড়ে/ আমার প্রাণের কাছে চলে আসি ,/ বলি আমি এই হৃদয়েরে:’… ।   বেদের ঋষি যখন প্রশ্ন করেছিলেন ,   এ-কথা সুবিদিত , সেই সময়ে বৈদিক মীমাংসা নিয়ে কারো প্রশ্ন করার কোনো অধিকারই ছিল না। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বেদ এমন এক জ্ঞানভাণ্ডার যা কেউ লেখেননি , তা কারো দ্বারা উক্ত নয় , সুতরাং তা উচ্ছিষ্ট নয় , তা অপৌরুষেয় এবং অলঙ্ঘনীয়। বলা হয়েছে, বেদের মন্ত্রগুলি বৈদিক ঋষিরা লেখেননি , তা নাকি তাঁরা স্বপ্নে পেয়েছিলেন। যে-কারণে তাঁরা মন্ত্রের রচয়িতা বা মন্ত্র-স্রষ্টা নন , তাঁদের বলা হল মন্ত্র-দ্রষ্টা। একথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে , সেই বেদবাক্য বা মন্ত্রের অথোরিটি নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না , বললে তাকে বেদ-বিরোধ...

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (৬)

  কে যেন ঘুর-ঘুর করে   ( ৬ )   ‘সে কেন জলের মতো ঘুরে-ঘুরে একা কথা কয়!/ অবসাদ নাই তার ? নাই তার শান্তির সময় ? ...’, হ্যাঁ, নিজেকে খুঁড়তে গিয়ে আবার জীবনানন্দকে স্মরণ করতে হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, এই একবিংশ-শতকে দাঁড়িয়ে আবার কেন সেই ‘বনলতা-সেন’-এর সৃষ্টিকর্তারই শরণ নিতে হল? উত্তরে বলা যায়, মনের অলি-গলিতে উঁকিঝুঁকি মারতে গিয়ে, যদি দেখি কেউ আমার অন্তঃস্থলের খবর জানে, তবে তার সঙ্গেই সখ্যতা তৈরি করব। তা সে জীবনানন্দ হতে পারেন, রজনীকান্ত হতে পারেন, রবীন্দ্রনাথ হতে পারেন…বা আরো আগে…অনেক আগে…সেই বৈদিক যুগের মুনি-ঋষিরা। হ্যাঁ, অবশ্যই বৈদিক-যুগ। আজ তবে   বেদের কথাই বলা যাক। আশ্চর্য এক সাহিত্য-সম্ভার এই বেদ, আরো আশ্চর্য সেই বেদের রচয়িতা আর্য-ভাষা গোষ্ঠীর মানুষেরা। কোন এক বিদেশের মাটিতে থেকে গোরু-ঘোড়া চরিয়ে ঘুরতে-ঘুরতে তারা দলে দলে পা রাখতে শুরু করেছিল এই ভারতীয় উপমহাদেশের মাটিতে। তারা প্রথমে এসেছিল তাদের পোষা গোরু-ভেড়াদের জন্য নতুন চারণ-ভূমির খোঁজে। কারণ তারা ছিল পশু-পালক জাত, সেই অর্থে ফুড-গ্যাদারিং ম্যান, প্যাসটোর‍্যাল। তারা এসেছিল প্রচণ্ড ঠাণ্ডার দেশ থেকে, যেখানে ...

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (৫)

কে যেন ঘুর-ঘুর করে     ( ৫ ) অতিমারীর কারণ দেখিয়ে এবছর মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি; সম্প্রতি তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, দেখা যাচ্ছে মাধ্যমিকে পাশের হার একশো শতাংশ, যা এক ইতিহাস। তাই নিয়ে সোশাল-মিডিয়ায় জোরদার আলোচনা চলছে, অনেকেই মত প্রকাশ করে বলছেন যেমন করেই হোক পরীক্ষাটা নেওয়াই যেত। পরীক্ষা নেওয়া যেত কিনা এটা নিয়ে আর বিতর্ক করে লাভ নেই। তার সময় পেরিয়ে গেছে। তবে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর গলাতেই একটা আক্ষেপের সুর শোনা যাচ্ছে, যে প্রশ্নটা তাদের মাথায় ঘুর-ঘুর করছে তা হল আগামী দিনে স্কুল-কলেজে  ভর্তির বেলায়, কিংবা কোনো চাকরি পেতে   এ বছরের মাধ্যমিক বা উচ্চ-মাধ্যমিকে পাওয়া নম্বরকে আদৌ গুরুত্ব দেওয়া হবে কিনা। স্বাভাবিক কারণেই আদের আশঙ্কা   বিনা পরীক্ষায় পাশের এই মার্কশিটকে একটা বোঝার মতো তাদের সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে নিজেদের স্কুল-জীবনের কথা। সেটা ১৯৭০-৭১ সাল। পশ্চিম-বাংলার ইতিহাসে সে এক উত্তাল সময়। রাজ্যের দিকে দিকে তখন নকশাল আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। যাদবপুর প্রেসিডেন্সি সমেত রাজ্যের অনেক নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কত মেধাবি পড়ুয়া...

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (৪)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে   ( ৪ ) মুরারি সিংহ   বেলুনের ভেতর যতক্ষণ হাওয়া আছে ততক্ষণই সে বেলুন, তার গায়ে একটা পিন ফুটিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে সে ‘গেলুম’। পঙ্‌ক্তিটা মনে এল এক সাম্প্রতিক মৃত্যুর ঘটনায়। প্রতিদিনই অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে যায়। প্রতিটা মৃত্যুর গায়েই জড়িয়ে থাকে একটা অনিবার্য শোকের আচ্ছাদন। সংশ্লিষ্ট পরিবার দুঃখে কাতর হবে এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক, এমনকি যারা সেই মৃত্যুর কাছাকাছি থাকে মৃত্যুর একটা শিরশিরে হাওয়া কম-বেশি তাদেরকেও স্পর্শ করে, কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। এমনিতে মৃত্যুর দর্শন আমাদের কাছে জলভাতের মতোই অতি সহজবোধ্য এবং জ্ঞান হবার পর থেকে জীবনের নিয়ম মেনে আমরা সকলেই মৃত্যু-চেতনার সঙ্গে পরিচিত ও অভ্যস্ত হয়ে উঠি। নিকটজনের চিরবিদায়ে যখন সেই মৃত্যু অত্যন্ত প্রকট হয়, তখন সব জেনে-বুঝেও আমরা আমাদের শোকের প্রকাশকে আটকাতে পারি না, আটকানোটা বোধহয় ঠিকও নয়। কারণ, সেই মৃত্যুকে ‘পার হয়ে’ আমরা পৌঁছে যাই জীবনের ‘নব-প্রভাতের শিখর চূড়ায়’। কৈশোর-উত্তীর্ন হয়ে মাত্র আঠারো বছর বয়সে বাবার মৃত্যু দেখেছি, খুব কাছ থেকে। তখন সবে কলেজের ফার্স্ট ইয়ার। নিকট জনেদের মধ্যে তারপর একে একে বড়োমা (জ্যাঠাই...

কে যেন ঘুর-ঘুর করে (৩)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে   ( ৩ ) / মুরারি সিংহ    ‘দুরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে পাক, এই দুনিয়া ঘুরে বনবন বনবন ছন্দে ছন্দে কত রং বদলায়, রং বদলায় …’;   ‘মাথার মধ্যে কী যেন ঘুর ঘুর করে’ ভাবতে গিয়ে আজ হঠাৎ এই গানের কলিগুলো মাথায় এল, মানে ঘুর-ঘুর করতে শুরু করল। সমস্ত দিন সেই সুরেই বিভোর হয়ে আছি। মনে হচ্ছে, সত্যি এই দুনিয়া এক দুরন্ত-ঘূর্ণি-পাক। ছত্রিশ-বছর। দেখতে দেখতে এতগুলো দিন কোথা দিয়ে কেটে গেল, বুঝতেই পারলাম না। চাকুরি-পর্ব শেষ করে এত দিন পরে যখন গ্রামে ফিরলাম, সে এক নতুন অভিজ্ঞতা। মনে হল, নিজেরই মাতৃভূমিতে, যেখানে আমার কৈশোর কেটেছে, প্রথম যৌবনেরও কিছুদিন, আজ যেন তা এক অতি দূর নক্ষত্রর দেশ। যে-মাঠে একদিন খেলাধূলা করেছি, যে-সব জায়গায় একদিন তুমুল আড্ডা দিয়েছি, গল্প করেছি, আজ তা নতুন প্রজন্মের দখলে। গল্পের রিপ-ভ্যান-উংকিল বিশ বছর পরে ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল, আমার কাছে এখন যেন তা এক বিদেশ। ছত্রিশ-বছর পরে এই লকডাউনের বাজারে আজ নিজেরই ভিটেমাটিতে আরেক রিপ-ভ্যান-উংকিল হয়ে আমি যেন আবার নতুন করে জেগে উঠলাম, বা বলা ভালো জন্ম নিলাম। সেই হিসাবে এ আমার দ্বিতীয় জন্ম। তার মানে এতদিন কি আ...

কে যেন ঘুর ঘুর করে (২)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে   ( ২) মুরারি সিংহ    দিবাস্বপ্ন বেয়ে অফিসের সামনের টেবিলে এসে বসে সে-যে বলে গেল, ‘স্যার, আজকাল মাথার মধ্যে কী যেন ঘুর ঘুর করে’, তাকে ঠিক চিনতে পারি না। মুখটা ভালো করে দেখবার আগেই সে মিলিয়ে যায়। কিন্তু, তার ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নটা আমার মাথায় ভিতর ঘুর ঘুর করতে থাকে। চটকা ভেঙে জেগে ওঠার পরেও। তাইতো, কী ঘুর ঘুর করে মাথার ভিতর? কে ঘুর ঘুর করে? আমিও ভাবতে থাকি। লকডাউনের কঠিন দুঃসময়ে কত কাছের মানুষকে হারালাম। তাদের মধ্যে দুই অতি ঘনিষ্ঠ আত্মজন নাসের ও গৌরাঙ্গ; তাদের স্মৃতি তো বারে বারে ভেসে ওঠে মনের পর্দায়। সেই সব আনন্দের মুহূর্ত, তারা সব সময় মাথার ভিতর ঘুর ঘুর করে। তবু অসুস্থতার প্রথম-পর্বে নাসেরকে একবার দেখতে ছূটে গিয়েছিলাম কলকাতার মেডিকাতে। গৌরাঙ্গর বেলাত সেটাও পারিনি। আমি এখন দেশের বাড়িতে; কতকাল কলকাতা ছাড়া, কবে ফিরতে পারব জানি না; আদৌ ফেরা হবে কিনা তাও ভবিষ্যতের গর্ভে। এখন গ্রামের বাড়িতেই থাকি; বড়ো একা একা দিন কাটে। সারাদিন শুয়ে বসে সময় কাটাতে কাটাতে হাতে-পায়ে খাল ধরে যায়; সকালে সন্ধ্যায় খানিক হাঁটতে বেরোই, গ্রামের রাস্তায়। কতদিনের পরিচিত পথ, কতদিন...

কে যেন ঘুর ঘুর করে (১)

  কে যেন ঘুর ঘুর করে  ( ১ )     মুরারি সিংহ    ইদানীং মাঝে মাঝে মনটা কেমন উচাটন হয়ে উঠছে। কতদিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিইনি, গল্প করিনি, এটা-ওটা নিয়ে তর্কে মেতে উঠিনি। মনে হচ্ছে, ওঃ! সে-সব দিন যেন গতজন্মের কথা। ইতিহাসে পড়েছি, স্বদেশী-যুগে ব্রিটিশ সেনারা নেতাজিকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল। এখন কোনো সেনা নয় এক অদৃশ্য ভাইরাস, আমার নাতির কথায় এক বেবি-ইন্সেক্ট-এর ঠ্যালায় আমরা সকলেই এখন ঘরবন্দি। বিশেষ দরকারে বাইরে বেরোনো যাবে, তবে তার অনেক বিধি-নিষেধ। মুখে মাস্ক পড়ো, অন্যের থেকে নিজেকে দূরে দূরে রাখো, কিছু জিনিস ছুঁলে হাতে স্যানিটাইজার লাগাও, তাড়াতাড়ি কাজ মিটিয়ে বাড়ি ফিরে পোশাক-আশাক ছেড়ে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত-মুখ ধোও, চান করো, ইত্যাদি ইত্যাদি। দূর্‌র্‌… এসব করতে আর কার ভালো লাগে, তার চেয়ে বাবা বাইরে বেরোবো না। ব্যাস! মিটে গেল ঝামেলা। কিন্তু ঝামেলা কি আর মেটে। সারাক্ষণ ঘরে বসে বসে করবটাই বা কী? কাজের মধ্যে খাওয়া দাওয়া ঘুম, দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকা, তারপর হয় টিভি দেখো, নাহলে মোবাইল ঘাঁটো। টিভিতেই আর কী দেখবে, রিমোট টিপলেই সেই একই খবর বারবার, সেই একই কাটমানি, চুরি,...